ধনী হওয়ার সহজ পথ ইনকামিং কল!

রুবেল আহমদ: ধনী হওয়ার পথ বাতলে দেওয়া আছে অনেক গ্রন্থে। পথে-ঘাটে দেখা যায়- কেউ কেউ গণনা করেও অগাধ ধনসম্পদ অর্জনের পথ বাতলে দেন। এমনও দেখা যায়, হতশ্রী চেহারা নিয়ে বসা ব্যক্তি এমন কাজ করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। তার প্রাপ্য কেবল ধনী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ব্যক্তির কাছ থেকে মেলা সামান্য অর্থ। তবে কপাল মন্দ হলে বিপদ নেমে আসতে পারে। কেউ জিজ্ঞাসা করে বসতে পারেন- আমাকে যে পরামর্শ দিলেন সেটা নিজের জন্য কেন প্রয়োগ করেন না। কেউ বা ভাগ্য গণনার জন্য টিয়া পাখির ওপর ভরসা করেন। তাদের বিশ্বাস_ মানুষ হিসাবে ভুল করতে পারে, কিন্তু পাখি ঠিক কাজটিই করবে। এভাবে ভাগ্য ফিরুক আর না ফিরুক, কিছু লোক যে দিব্যি পথে-ঘাটে বসে পরিবার চালানোর মতো রোজগার করতে পারছেন তাতে সন্দেহ নেই। আবার রোজগার না হলে ঘরে ফিরতে হয় বিরস বদনে। তখন ভাবেন- মানুষের ভাগ্য ফেরানোর কথা বলি; কিন্তু নিজের ভাগ্য আর ফেরে না।
‘হাজার কোটি টাকার রাজস্ব জালিয়াত চক্রের পকেটে’। গত সাত মাসে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল থেকে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ চলে গেছে আন্তর্জাতিক কলকে ঘিরে সক্রিয় একটি প্রভাবশালী চক্রের পকেটে। এ চক্রের সঙ্গে কেবল বাংলাদেশের নয়, অন্য দেশের লোকেরাও জড়িত। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক কল থেকে সরকারের রাজস্ব চুরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ কাজে সফলতা আসে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে। প্রতিদিন তাদের কারণে সরকারকে রাজস্ব হারাতে হচ্ছে দেড় কোটি টাকা। জালিয়াত চক্রের ধৈর্য আছে বটে! আবার বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ধৈর্যও কম নয়। তারা হয়তো ‘দেখি না কী করে চোর’ নীতি অবলম্বন করে আছে। এ নিয়ে গল্পটা এ রকম- এক চোর গভীর রাতে প্রবেশ করেছিল গৃহস্থের ঘরে। গৃহস্থ তা টের পেলেন এবং ঘুমের ভান করে অপেক্ষা করলেন চোর কী করে তা দেখার জন্য। চোর এক এক করে নানা জিনিস বস্তায় ভরতে লাগল। আর গৃহস্থ তা দেখে ভাবনায় মশগুল- দেখি এরপর কী করে। চোর বস্তায় ভরার মতো যা কিছু পেল সব নিল। তখনও গৃহস্থ দেখতে চাইলেন- এরপর কী ঘটে। এক সময় চোর বস্তা কাঁধে তুলল। তার অন্য হাত খালি রয়েছে। যাওয়ার সময় সে হাতে টেনে নিল গৃহস্থের মাথার নিচের বালিশটা। তখনও গৃহস্থ ভাবছেন- এরপর চোর কী করে, সেটা দেখতেই হবে। চোর তখন খোলা দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেল গৃহস্থের মন্তব্য- আমি কিন্তু সব দেখে ফেলেছি। চোর দ্রুতই সম্বিত ফিরে পেল এবং দ্রুত পালাল। যাওয়ার সময় কেবল বলে গেল- আমিও নিরাপদে বিদায় নিচ্ছি।
বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার দেখভাল করার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো এমন অবস্থান নিয়ে থাকলে বলার কিছু নেই। তারা আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কারবার করে। এজন্য প্রয়োজনীয় আইন-কানুন তারা তৈরি করে। চোর ধরার কৌশলও তাদের অজানা থাকার কথা নয়। চোরের শাস্তি কীভাবে দেওয়া যায়, সেটাও তারা নিশ্চয়ই জানে। তবে সম্ভবত তাদের সমস্যা ডাকাতদের ধরার ক্ষেত্রে। সব জেনেও কি তারা দেখি না কী হয় ভাবনায় মশগুল থাকে? লেখক: কলামিস্ট, প্রবাসী।